শিরোনাম
ব্রি উদ্ভাবিত চার ধানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা=ব্রি-৫৯, ব্রি-৬০,ব্রি-৬১,ব্রি-৬২।
বিস্তারিত
ব্রি উদ্ভাবিত চার ধানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা
| |
জিংকসমৃদ্ধএকটিসহ ধানের নতুন চারটি উচ্চফলনশীল (উফশী) জাত উদ্ভাবন শেষে আনুষ্ঠানিকঅবমুক্তির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)।প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ড. সাইদুল ইসলাম গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনেনতুন চার জাতের ধান উদ্ভাবন ও অবমুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। এর আগেসোমবার এসব ধান কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অবমুক্তির অনুমোদন দেয় জাতীয়বীজ বোর্ড। গাজীপুরে ব্রি কার্যালয়ের মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেব্রি-৬২-এর মুখ্য গবেষক ড. আলমগীর হোসেন ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতনবৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নতুন অবমুক্ত ধানের জাতগুলো হলো-বোরো মৌসুমের ব্রি-৫৯, ব্রি-৬০ ও ব্রি-৬১ এবং আমন মৌসুমের ব্রি-৬২। এরমধ্যে সর্বাধিক আলোচিত হচ্ছে ব্রি-৬২। কারণ এটি জিংকসমৃদ্ধ আগাম জাতের ধান। ড.সাইদুল ইসলাম জানান, আলোচিত ব্রি-৬২ জাতটি এখন পর্যন্ত দেশে সবচেয়ে আগাম ওস্বল্পমেয়াদি ধানের জাত। বায়ো ফর্টিফাইড পদ্ধতিতে বিশ্বে এ রকম ধানের জাতএই প্রথম উদ্ভাবিত হলো। তিনি আরো জানান, দেশি ধানের জাত জিরা কাটারি ওব্রি-৩৯-এর সংকরায়ণ (জৈব গুণ উন্নত ও সমৃদ্ধ) করে প্রচলিত ব্রিডিং পদ্ধতিঅনুসরণের মাধ্যমে জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। মাত্র ১০০ দিনে এ ধান ফলন দেবে।গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৫ টন। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ৪ দশমিক ৫থেকে ৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। এ ধানগাছের গড় উচ্চতা ১০২ সেন্টিমিটার।চাল লম্বা, সরু ও সাদা। ব্রির মহাপরিচালক জানান, এখন পর্যন্তঅন্যান্য দেশে জিংকসমৃদ্ধ যেসব সনাতন জাত রয়েছে সেগুলোর সর্বোচ্চ গড় মাত্রা১৪ থেকে ১৬ পার্টস পার মিলিয়ন (পিপিএম)। আর উদ্ভাবিত ব্রি-৬২-র গড় পিপিএমমাত্রা ২০ থেকে ২২ পিপিএম। অর্থাৎএটি মধ্যম মাত্রার জিংকসমৃদ্ধ জাত।জিংকসমৃদ্ধ জাতের ধানের চাল গণমানুষের অনুপুষ্টি চাহিদা অনেকাংশে পূরণকরবে। বিশেষ করে শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে এটি হবে অত্যন্ত সহায়ক।দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৪০ ভাগের বেশি স্টান্টেড অর্থাৎবেঁটে হয়ে থাকে। আর একই বয়সের ৪৪ ভাগ শিশু জিংক ঘাটতির শিকার। সারা বিশ্বেপ্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ শিশু জিংকের ঘাটতিজনিত রোগে মারা যায়। মানবদেহকোষের গঠন, দৃষ্টিশক্তি, রোগ প্রতিরোধ, যৌন ক্রিয়া বৃদ্ধি ইত্যাদিতেজিংকের ভূমিকা রয়েছে।
'ব্রি-৬২ ধানের উদ্ভাবকদের অন্যতম ব্রির মুখ্যবৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলমগীর হোসেন জানান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পার্থসারথি বিশ্বাস ও রকিবুল হাসানকে নিয়ে তিনি ২০০২ সালে গবেষণা শুরু করেন।কয়েক বছর আগে রকিবুল বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেলে তারা দুজন চেষ্টা চালিয়েচার বছর আগে সফল হন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শেষে সোমবার জাতীয় বীজ বোর্ড জাতটিরঅনুমোদন দেয়। নতুন জাত উদ্ভাবন করতে পেরে তারা খুব খুশি। ব্রিধান-৫৯ : ব্রির মহাপরিচালক জানান, নতুন অন্য তিনটি ধানের মধ্যে ব্রি-৫৯জাতটি খুবই সফল। ব্রি থেকে এ পর্যন্ত ধানের যতগুলো জাত অবমুক্ত হয়েছে এরমধ্যে ব্রি-২৮ ও ২৯ সর্বোচ্চ ফলনশীল ধান। ব্রি-২৯-এর ফলন হেক্টরপ্রতি আটটনের বেশি। এর জীবনকাল ১৬০ থেকে ১৬৫ দিন। নব উদ্ভাবিত ব্রি-৫৯ জাতের ধানেরজীবনকাল ১৫৩ দিন। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ৭ দশমিক ১ টন। তবে উপযুক্ত পরিচর্যাপেলে উৎপাদন ৮ দশমিক ৫ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। ব্রি ধান-৬০ : ব্রি-৬০জাতটিও অধিকতর স্বল্প জীবনকালের। বিআর-২৬ জাতের মধ্যে সংকরায়ণের পরপেডিগ্রি সিলেকশনের মাধ্যমে জাতটি উদ্ভাবিত। এ ধানের জীবনকাল ১৫০ দিন এবংহেক্টরপ্রতি ফলন ৭ দশমিক ৩ টন, যা উপযুক্ত পরিচর্যায় ৮ দশমিক ৫ টন পর্যন্তহতে পারে। ব্রি ধান ৬১ : ২০০৭ সালে ব্রি-৪৭ নামের একটি লবণ সহনশীলজাত উদ্ভাবন করে ব্রি। চারা অবস্থায় যার লবণ সহনশীলতা ১০-১২ ডিএস/মিটার এবংভেজিটেটিভ স্টেজ থেকে রিপ্রোডাক্টিভ স্টেজ পর্যন্ত গড়ে ৬ ডিএস/মিটার। তবেপরিপক্ব ধান কিছুটা ঝরে পড়ার প্রবণতা আছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণেব্রি-২৯-এর সংকরায়ণের মাধ্যমে ব্রি-৬১ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলন ব্রি-২৮জাত থেকে ১ দশমিক ৫ টন বেশি, জীবনকাল ১৪৫ থেকে ১৫০ দিন। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্যহলো তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ১২-১৪ ডিএস/মিটার পরিমাণ লবণাক্ততা থাকলেও প্রতিহেক্টরে চার টন ফলন দিতে সক্ষম। তবে লবণাক্ততার মাত্রা এর থেকে কম হলে ৭দশমিক ৫ টন পর্যন্ত ফলন হতে পারে। এ ধান পাকা অবস্থায় ঝরে পড়ে না এবং চালমাঝারি চিকন।
| |
|